১৬. অপরিণামদর্শী ছেলে- শেখ সাদির গল

এক দরিদ্র দরবেশের পুত্র তার পিতৃব্যদের উত্তরাধিকার সূত্রে বিস্তার ধনরত্নের মালিক হয়েছিল। আনন্দে আত্নহারা হয়ে সে অসংখ্য অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত হলো এবং অর্থের অপব্যয় শুরু করে দিল। মোটকথা এমন কোন অন্যায় কাজ রইল না, যা সে না করল এবং এমন কোন নেশার জিনিস ছিল না, যা সে পান না করল।

একদা উপদেশস্বরূপ তাকে সস্নেহে বললামঃ বাবা! আয় রোজগার স্রোতের পানির পত এবং ব্যয় আবর্তিত পাথর নুড়ির মত। স্রোতের বেগের অনুপাতে নুড়ি গড়ায়। অর্থাত অপরিমিত ব্যয় ওই ব্যক্তি করতে পারে, যার আয়ও নদীর পানির মত নিয়মিত। তোমার নিয়মিত অর্থ আয়ের যখন ব্যবস্থা নেই, তখন অর্থ ব্যয় একটু কমাও। বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগাও, অযথা আমোদ-প্রমোদ ছেড়ে মিতব্যয়ী হও। আয়হীন সীমিত ধন-ভান্ডার একদিন ফুরিয়ে যায়। তখন অর্থাভাবে কষ্ট পাবে এবং লোক সমাজে লজ্জিত হবে। সময় থাকতে সতর্ক হও।

আমোদ-প্রমোদের মোহে মত্ত ছেলেটা আমার কথায় কর্নপাত করল না। বরং প্রতিবাদ করে বললঃ অনাগত দুঃখের কথা ভেবে আশু আনন্দ নষ্ট করা যুক্তি বিরুদ্ধ। তাছাড়া দান, ধ্যান, ও দয়া দাক্ষিণ্যে বর্তমানে আমি সমাজে মানবতার শীর্ষ স্থানে অধিষ্ঠিত। দেশের আপামর জনসাধারণের মুখে সর্বত্র আমার সুনাম,সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় কি করে আমি আমার উদার নীতির পরিবর্তন করতে পারি।

দেখলাম আমার নরম নসীহত তার মোহান্ধ গরম হৃদয়ে প্রবেশ করল না; বরং আবেগের বন্যায় আমার যুক্তির বাধ তৃণের ন্যায় ভেসে গেল। অগত্যা বৃথা উপদেশ বর্ষণ থেকে বিরত রইলাম এবং বিরক্তির সাথে তার সংশ্রব ত্যাগ করলাম।

জ্ঞানী মনিষীরা বলে গেছেন, উচিত কথা বলা উচিত, তাই বল।

মানলে ভাল, না মনলে তোমার কোন ক্ষতি হবে না।

এরপর আমি যা ধারণা করেছিলাম, কার্যত তাই হলো। অল্পদিন পরেই সেই অদুরদর্শী যুবক অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ল। তার সুদিনের বন্ধুরা একে একে সরে পড়ল। অগ্যতা সে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করতে বাধ্য হলো।

একদিন দেখলামঃ তালি দেয়া পুরানো পোশাকে সে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছে। তার দুঃখ-দুর্দশা দেখে মনে বড় দুঃখ হলো। কিন্তু মানবতার খাতিরে তিরষ্কার করে কাটা ঘায়ে নুনের ছিলা দেয়া সংগত মনে করলাম না।

শিক্ষাঃ ছোট লোকের ছেলে বড় হলে পেছনের কথা ভুলে যায়, সম্পদ হাতে আসলে হিসাব না করেই খরচ করে। পরিণাম কি হবে চিন্তা করে না। জ্ঞানী লোকের উপদেশ বানের পানির মত ভেসে যায়। পরিশেষে তারা হীন অবস্থায় পতিত হয়।