ইন্টারভিউ
সবারই, বিশেষ করে নতুন্দের একটা কৌতূহল আছে এটা জানার যে কি হয় ইন্টারভিউ রুমে। আমি বেসরকারি দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ইন্টারভিউ প্রসেস জানাবো আপনাদের আজকের লেখায়।
লিখিত পরীক্ষা:
একটি খালি পদের জন্য যখন ৫০ থেকে ১০০ বা তার চেয়েও বেশি আবেদন পড়ে তখন মেধা যাচাইয়ের জন্য অনেক কোম্পানি লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করেন। লিখিত পরীক্ষা গুলোতে আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন ওই পদের কাজের সাথে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন থাকবে। এরপর প্রশ্ন থাকবে কিছু সাধারণ জ্ঞান, কিছু অনুবাদ। উপস্থিত বুদ্ধি পরীক্ষার জন্য থাকবে কিছু প্রশ্ন। এক এক কোম্পানির প্রশ্ন ও নম্বর বন্টনের ধরন এক এক রকম।
মৌখিক পরীক্ষা:
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় মৌখিক পরীক্ষায়। মৌখিক পরীক্ষা নানান ভাবে হতে পারে। ধরুন, ১০০ জনের মধ্য থেকে ৮ জনকে ইন্টারভিউ দিতে ডাকা হয়েছে। চলুন দেখি কি কি হতে পারে এখানে:
১। ৮ জনকে হয়তো দুইটি দলে ভাগ করে দেওয়া হল। তাদেরকে কোন একটা বিষয়ে তর্ক করতে বলা হল। তর্কের বিষয় অনেক রকম হতে পারে। যেমন ধরুন, “স্মার্ট ওয়ার্ক ও হার্ড ওয়ার্ক”, “জীবনে টাকা ও সম্মানের গুরুত্ব” ইত্যাদি যে কোন বিষয়। বিশেষ করে বিক্রয়, কাস্টমার কেয়ার, সাপ্লাই চেইন এমনকি উৎপাদন বিভাগে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তর্কের আয়োজন করা হয়। প্রশ্ন হতে পারে,কেন এই তর্কযুদ্ধ? আসলে এই তর্কের মাধ্যমে যাচাই করা হয়, আপনি আসলে নির্দিষ্ট বিষয়ে কতটা ফোকাস করে কথা বলতে পারেন ও আপনি কতটা যুক্তিবাদী। দেখা হয় আপনি গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন কি না।
২। যে কোন ঘটনার উপর আপনাকে উপস্থিত বক্তৃতা দিতে হতে পারে। যেমন ধরুন, মেট্রোরেল,ফ্লাইওভার, বইমেলা, প্রিয় মুভি, প্রিয় নেতা ইত্যাদি। আপনাকে যে বিষয় দেওয়া হবে সেটা আপনি কতটা সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন সেটিই বিচার করা হয় এখানে। অনেক ক্ষেত্রে এখানে নম্বর দেয়ার কাজটা করে বাকি ক্যান্ডিডেটরা।
৩। আপনাকে বলা হতে পারে কোন একটি পেপারের অংশ বিশেষ দিয়ে সেটি বাংলায় অনুবাদ করতে। পরবর্তীতে বলা হতে পারে সেটা বাংলা ও ইংরেজিতে টাইপ করতে। আপনার অনুবাদের দক্ষতা ও টাইপ স্পিড দুটোই জানা হয়ে গেল এই টেস্টের মাধ্যমে। ভালো কোম্পানি ভালো পোস্টের জন্য শুধু টাইপ স্পিড বা অনুবাদের দক্ষতাই যাচাই করে না, তারা অনেক সময় এক্সেলেরও ছোট খাটো সমস্যা সমাধান করতে বলে।
৪। আধা ঘন্টার প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে বলাটা বেশ কমন হয়ে যাচ্ছে আজ কাল। একটি নির্দিষ্ট বিষয় দিয়ে দেওয়া হয়। কখনো গ্রুপে, কখনো বা এককভাবে তৈরি করতে হয় প্রেজেন্টেশন। সেখানে বিচার করা হয় আপনি টিমে কতটা কাজ করতে পারেন, আপনি কতটা লিড নিতে পারেন। আর সবশেষে যাচাই করা হয় আপনার প্রেজেন্টেশন স্কিল। পাওয়ার পয়েন্টে কাজ পারেন কি না সেটাও রিক্রুটার এখান থেকেই যাচাই করতে পারেন। তাই যারা ল্যাবে ফাঁকি দেন, অ্যাসাইনমেন্ট আরেকজনেরটা কপি করেন তারা সাবধান। একদিন কিন্তু ঠিকই ধরা খেয়ে যাবেন.
৫। উপস্থিত বুদ্ধি যাচাই প্রায় সকল বহুজাতিক কোম্পানিতেই করা হয়। “আপনি জঙ্গলে যাবেন,কোন জিনিসটি সাথে নিবেন?”, “আপনাকে এক মাস ছুটি দিলে কি করবেন?”, “এক কোটি টাকা পেলে কি করবেন?”, এরকম প্রশ্ন করা হবে আপনাকে। উত্তর ভেবে চিন্তে দিতে হয় এসব ক্ষেত্রে। আপনি হয়তো বললেন বনে টর্চ লাইট নিয়ে যাবেন। তাহলে খাবেন কি? ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলেই বা কি করবেন? আপনি বললেন আপনি বই নিয়ে যাবেন। তাহলে আত্মরক্ষা করবেন কিভাবে? এই ধরনের প্রশ্ন করে যাচাই করা হয় আপনার দূরদৃষ্টি। চাকু হতে পারে একটি সঠিক উত্তর। আত্মরক্ষা হবে, খাবারও খাওয়া যাবে। আগুন আরেকটি ভালো উত্তর হতে পারে। উপস্থিত বুদ্ধি যাচাই করার জন্য অনেক সময় ধাঁধা দেওয়া হয়।
৬। অনেক ক্ষেত্রে কেস দেওয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট অবস্থার কথা বলা হয়। এরপর কিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়। সেগুলোর উত্তর করতে হয়।
৭। পার্সোনালিটি টেস্ট এখন খুবই কমন হয়ে গিয়েছে। আপনি মানুষ হিসেবে কেমন? আত্মকেন্দ্রিক নাকি মিশুক, আপনি কি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন নাকি আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, আপনি কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করেন, লোকজনের সাথে কিভাবে মিশেন সেগুলো বের করার জন্য টেস্ট আছে কিছু। এগুলোকে বলে সাইকোমেট্রিক টেস্ট। আপনাকে কিছু বিবৃতি বা লাইন দেওয়া হবে। আপনাকে হয়তো হ্যাঁ অথবা না বলতে হবে। খুব সোজা এই টেস্ট। আপনি টেরই পাবেন না কখন আপনি মানুষ হিসেবে কেমন সেটার পরীক্ষা হয়ে গেল। এই টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে আপনি একজন বিক্রয় কর্মী হিসেবে কেমন, আপনি লিডার হিসেবে কেমন, আপনি টিমে কেমন কাজ করবেন। এই ধরনের পরীক্ষা গুলো অনেক রিসার্চের ফল। তাই চাইলেও ফলাফল অগ্রাহ্যের সুযোগ নেই।
৮। মূল্যবোধের পরীক্ষা, ভালো ও মন্দের পার্থক্য আপনি কিভাবে করেন এবার হবে সেই পরীক্ষা। বিভিন্ন অবস্থায় আপনি কি সিদ্ধান্ত নিতেন জানতে চাওয়া হবে। আপনি উত্তর করলেই বেরিয়ে আসবে আপনার মূল্যবোধ কি ধরনের।
৯। আপনার পূর্ববর্তী চাকরীর রেকর্ড ও কাজের ধরন চেক করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা হয় অথবা ডকুমেন্ট টেস্ট করা হয়। পে স্লিপ, অব্যাহতি পত্র, অর্থ সংক্রান্ত নিষ্পত্তিনামা চেক করা হতে পারে। সার্টিফিকেটের মেইন কপি কাউকে দিবেন না। এটা বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী অবৈধ।
বেড়িয়ে আসুন নিজের খোলস থেকে!
কর্পোরেট জগতে চাকরির ক্ষেত্রে কিছু জিনিস ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি
১০। আপনার রেফারেন্স চেক হতে পারে। তাই যাদের সিভিতে রেফারেন্স রেখেছেন, তারা যেন আপনার সম্পর্কে সত্য তথ্য দেন সেই ব্যাপারে তাদের জানিয়ে রাখুন। আত্মীয় স্বজনদের রেফারেন্স রাখবেন না। আপনার শিক্ষক ও কর্মক্ষেত্রে বস অথবা কলিগদের রেফারেন্স রাখতে পারেন।
এভাবে ধাপে ধাপে আপনাকে যাচাই করা হয়। এই কাজগুলো করতে পুরো একদিন সময় লেগে যায়। এসব ধাপ যদি আপনি উত্তরণ করতে পারেন তাহলেই ফেস করবেন ইন্টারভিউ বোর্ড।
সদা আত্মবিশ্বাসী ও উদ্যমী ভাবে নিজেকে তুলে ধরুন
ভালো কোম্পানিগুলো অনেক যাচাই বাছাই করে সর্বোত্তম লোকটিকেই বেছে নেয়। তাই ওইসব কোম্পানির লোকেদের চাকরি ছাড়ার প্রবনতাও অনেক কম। মানব সম্পদ বিভাগের লোকেরা তাই অল্প সংখ্যক ক্যান্ডিডেটের ইন্টারভিউ অনেক সময় লাগিয়ে নেন। এদের সিভি বাছাই থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজই নিখুঁত।
আমরা ইন্টারভিউ ব্যাপারটাকে খুব হালকাভাবে দেখি। আসুন, জেনে নেই কিছু ইন্টারভিউ টিপসঃ
১। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় পোশাকের প্রতি লক্ষ্য রাখুন। ছেলেরা চুল এলোমেলো রাখবেন না, শেভ করে যাবেন। কাপড়-চোপড় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। পোশাক আপনার রুচিবোধের প্রকাশ ঘটায়। কানে দুল, ব্রেসলেট ছেলেদের পোশাক নয়। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে এগুলো পরে যাবেন না। মেয়েরাও মার্জিত পোশাকে যাবেন। ঝাঁজালো গন্ধের বডি স্প্রে বা সেন্ট মাখাবেন না। সকল ক্ষেত্রে রুচিশীল হোন। ফ্রেশার যারা আছেন তারা অনেক সময় ছাত্রদের মত পোশাক পরেই ইন্টারভিউ দিতে চলে যান। মনে রাখবেন ছাত্র জীবন শেষ কিন্তু।
২। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় অবশ্যই সিভি, কভার লেটারের একটি কপি প্রিন্ট করে নিয়ে যাবেন। আপনার সিভি প্রিন্ট করতে রিক্রুটার বাধ্য নন।
৩। কলম না নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া শুধু ভুলই নয়, অপরাধও বটে। লেট করে যাওয়া আরেকটি বড় অপরাধ।
৪। রিক্রুটার বাংলায় প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দিবেন না। এটা বেয়াদবি, ওভার স্মার্টনেস।
৫। আপনি ইংরেজিতে দুর্বল হলে, রিক্রুটারের কাছে বাংলায় কথা বলার অনুমতি চেয়ে নিন। এতে রিক্রুটার শুধু বুঝবে যে আপনার ইংরেজি দুর্বল। কিন্তু এটা না করে আপনি যদি ভুল ইংরেজি, আধো আধো ভাবে বলতে চান, তাহলে আপনার আরও অনেক দিকই আপনি তুলে ধরতে পারবেন না। আরও বেশি হেয় হবার সুযোগ থাকবে।
৬। ইন্টারভিউ বোর্ডে অনেকে বসা থাকেন। যে প্রশ্ন করবে, তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন, নিচে অথবা এদিক সেদিক তাকাবেন না।
৭। ফোন সাইলেন্ট রাখবেন, ইন্টারভিউ চলাকালীন ভাইব্রেশানও থাকা চলবে না।
৮। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে মিথ্যা বলবেন না। তারা বুঝতে পারে। ইন্টারভিউ দিতে ঢোকার আগে সিগারেট খাবেন না।
৯। যে কোম্পানিতে আবেদন করেছেন ওই কোম্পানি সম্পর্কে জেনে যাবেন, ওই কোম্পানির প্রোডাক্ট কি, সার্ভিস কি না জেনে যাবেন না।
১০। যে পদের জন্য আবেদন করেছেন ওই পদের কর্ম বর্ণনা ভালো ভাবে পড়ে যাবেন। আমি স্যার সব পারবো, এরকম ভাঁড়ামো মার্কা কথা বললে চাকরি হবে না।
১১। রিক্রুটারের সাথে তর্ক করবেন না। আপনার চাকরি এখনো হয়নি। এটা মনে রাখবেন। সহনশীল, ভদ্র, নমনীয় আচরণ করবেন।
১২। আপনি চাকরী পাচ্ছেন না, তাই মানসিক ভাবে একটু দুর্বল, কিন্তু কিছুতেই সেটা রিক্রুটারকে বুঝতে দেবেন না। সদা আত্মবিশ্বাসী ও উদ্যমী ভাবে নিজেকে তুলে ধরুন।
কর্পোরেট জীবনে প্রবেশ করার জন্যে বা প্রবেশ করার পর একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে হলে দরকার সঠিক দিকনির্দেশনা। আর সে নির্দেশনা পেতে ঘুরে এসো কর্পোরেট গ্রুমিং নিয়ে আমাদের প্লেলিস্টটি থেকে!
১৩। উদ্ধত ও দাম্ভিক আচরণ করবেন না। চাকরি না হোক, সু-সম্পর্ক বজায় রাখুন সবার সাথে।
১৪। আপনি মানসিক চাপ নিতে পারেন কি না তার জন্য অনেক সময় আপনাকে রিক্রুটার ভারি গলায় কথা বলতে পারেন। মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। আপনার টেস্ট হচ্ছে। এটাকে বলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স টেস্ট। এখানে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
১৫। সবশেষে আবারো বলি, কাজকে ফোকাস করে আকর্ষণীয় সিভি তৈরি করুন। কাজ আপনার হয়ে চাকরির জন্য সুপারিশ করবে। এভাবে আপনি ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত আসবেন। তারপর আবার নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরুন কর্মদক্ষ, পরিশ্রমী, উদ্যমী হিসেবে। আপনার কথা শুনে কাজ দেখে রিক্রুটার যেন বলতে বাধ্য হয়, “ভাই, আপনাকেই তো খুঁজছিলাম, কোথায় ছিলেন এতদিন?”
ইন্টারভিউ বোর্ডে সচরাচর জিজ্ঞাসিত ৫টি প্রশ্ন
ইউনিভার্সিটি থেকে এ বছরই গ্রাজুয়েশন শেষ করছে অয়ন। পড়াশোনা শেষ করেই শুরু করতে হবেনতুন একটি জীবন।শেষ কিছুদিন ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দিতে অয়ন প্রায়ই ভাবছে খুব জলদি তাকে চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে হবো। কিন্তু মনে মনে একটি শংকা কাজ করছে তার মাঝে।ভাবছিলচাকরির জন্য তাকে ইন্টারভিউ বোর্ডের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে তাকে কী প্রশ্নকরা হবে, কীভাবে সেগুলোর উত্তর দিবে এই ভাবনা অয়নের মাঝে চাকরি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরিকরছে।সে মনে মনে ভাবছিলো, যদি সে জানতে পারতো ইন্টারভিউ বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়তাহলে পরীক্ষা শেষ করেই সে প্রস্তুতি শুরু করতে পারবে।
যদিও পড়াশোনা বিষয়ক জ্ঞান তার মাঝে যথেষ্ট ছিল, কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করাহবে এ বিষয়টি নিয়ে অয়ন ছিল চিন্তিত। সে জানে বর্তমান যুগে ইন্টারভিউ বোর্ডে পড়াশুনার বাইরেওঅনেক প্রশ্ন করা হয়।আর এই চিন্তাই অয়নের মাঝে ইন্টারভিউ নিয়ে ভীতি তৈরি করছে। অয়ন তাইসিদ্ধান্ত নিলো সে অনুসন্ধানের চেষ্টা করবে সাধারণত ইন্টারভিউ বোর্ডে কী ধরনের প্রশ্ন করা হয়।
চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে ইন্টারভিউ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমাদের প্রত্যেকেরই ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেনানান ভীতি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ধারণাও করতে পারি না আসন্ন ইন্টারভিউতে আমাদের কী রকমপ্রশ্ন করা হবে।ইন্টারভিউ-এর ভীতি কাটানোর জন্য কোন কোন বিষয়গুলোতে ইন্টারভিউ বোর্ডেসাধারণত প্রশ্ন করা হয় তার একটি সম্যক ধারণা থাকা আমাদের সকলেরই উচিত।
ইন্টারভিউ বোর্ডে করা কিছু সাধারণ প্রশ্ন সম্পর্কে যদি আপনি আগে থেকেই ধারণা নিয়ে যেতেপারেন তাহলে বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সাহস আপনার মাঝে এমনিই আসবে।আত্নবিশ্বাসীহতে হবে, যে বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন সে বিষয়ের সাধারণ প্রশ্নগুলোর উত্তর মাথায় রাখতে হবেএছাড়াও কিন্তু যারা আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তারা যেহেতু অনেক অভিজ্ঞ সেহেতু আপনার আরআমার মতো এই সাধারণ ব্যাপারগুলো তাদের আগের থেকে জানা থাকে।
ইন্টারভিউ বোর্ডে সাধারণত দুই ধরণের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। প্রথমত আপনার পারদর্শিতা মূলকপ্রশ্ন দ্বিতীয়ত আপনার চারিত্রিক মূলক কিছু প্রশ্ন।পারদর্শিতা মূলক প্রশ্নগুলোর মাঝে থাকে আপনারদক্ষতা, যোগ্যতা, ক্ষমতা, কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ এসব নিয়ে। চারিত্রিক প্রশ্নগুলোর মাঝে থাকে সহজাত মূল্যবোধ এবং আপনার ব্যক্তিত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন। Cue Ball Group এর বিজনেস কনসালটেন্ট এবং CEO Anthony Tjan বলেছেন, দুই শ্রেণীর প্রশ্নই ইন্টারভিউ এর জন্য অনেকগুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা শুধুমাত্র পারদর্শিতার দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি অপরদিকে অন্যান্যগুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আত্মজ্ঞান, সততা এসবকে এড়িয়ে যাচ্ছি, অথচ ইন্টারভিউ বোর্ডে গুরুত্বসহকারে এসবদিকগুলোকেও বিবেচনা করা হয়।
যেকোন সংস্থার জন্যই চারিত্রিক প্রশ্নগুলো এবং পারদর্শিতামূলক প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেনে নিতেপারেনন ইন্টারভিউ বোর্ডে করা পাঁচটি প্রশ্ন যা আপনার স্বপ্নের রাস্তায় হাটার পথকে করতে পারে সহজ।
১. নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?
এই প্রশ্নটি ছুড়ে দেওয়ার পেছনের কারণ কিন্তু যারা আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তারা আপনারব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়ার জন্য করেন নি। তারা অবশ্যই জানতে চাচ্ছে না আপনার শখ কি? পরিবারে কে, কে আছেন? বা আপনি খেলাধূলা পছন্দ করেন কিনা? এসব ব্যক্তিগত বিষয় জানতেচাওয়া তাদের মূল উদ্দেশ্য না। তারা জানতে চাচ্ছে কোন কোন অর্জনগুলো বা কোন কোনকাজগুলো আপনার পরিচয় বহন করছে। আপনি কিভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য প্রস্তুতিনিচ্ছেন এসব। পরবর্তীতে ইন্টারভিউ বোর্ডে কখনো এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হলে নিজের কাজ এবংঅর্জনের জায়গাগুলো সম্পর্কে জানাবেন। নিজের তথ্য দিয়ে উচ্চপদস্থ কাউকে বিরক্ত করবেন না।
২. আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কী?
এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে বেশীরভাগ মানুষ নিজেকে প্রমাণিত করতে গিয়ে বলে, আমি অনেকপরিশ্রমী, আমি ভালো কাজ পারি ইত্যাদি। কখনোই ইন্টারভিউ বোর্ডে এধরণের উত্তর দিবেন না।তাইবলে এরকম ও উত্তর দিবেন না যে পরিবর্তণীয় পরিস্থিতির সাথে তাল মেলাতে পারেন না বা সবারসাথে মিশতে পারেন না।দুর্বলতা আমাদের সবাইরই আছে কিন্তু সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে এই প্রশ্নেরউত্তরে অবশ্যই আপনার দুর্বলতার কথা উল্ল্যেখ করুন, তবে এরকম দুর্বলতা যা আপনার চাকুরীটাকরার ক্ষেত্রে যোগ্যতামূলক প্রশ্ন তুলবে না। অথবা এমন একটি দক্ষতার কথা বলুন যাআপনার, মাঝে নেই কিন্তু আপনি শিখছেন।
৩. আগের চাকরী টা কেনো ছাড়তে চাচ্ছেন?
এরকম প্রশ্নের উত্তরে ভুলেও আপনার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে এমন কিছু না যা কিনাসে, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেয়।প্রতিষ্ঠানের যত ভালো দিক আছে বলুন, বসের প্রশংসাকরুন সেই সাথে আপনি জানান নতুন আরো অনেক কিছু শেখার জন্য আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানেরসাথে কাজ করতে চান অথবা নতুন আরো অভিজ্ঞতা অর্জণ করতে চান। পূর্বের চাকরীর ব্যপারেনেতিবাচক কথা বলা থেকে দূরে থাকুন।
৪. পাচ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
প্রশ্নটি খুব অদ্ভুত শোনালেও চতুরতার সাথেই দিতে হবে উত্তর। পাঁচ বছর আপনি কাজ করবেনকিনা সেটার নিশ্চয়তা নেই, প্রতিষ্ঠান কোন অবস্থানে যা তাও জানা নেই তবুও এই উত্তরটি আপনাকেদিতে হবে।এই প্রশ্নটির উত্তরের জন্য এমন কোন ব্যক্তিত্বের কথা উল্ল্যেখ করতে পারেন যার এইপ্রতিষ্ঠানের সফলতায় অনেক অবদান ছিলো, চাইলে প্রশ্নটি ইন্টারভিউ বোর্ডের দিকে ঘুরিয়ে দিতেপারেন, তাদের কী পরিকল্পনা আগামী পাঁচ বছর নিয়ে। তারা যা বলবেন তা থেকে ধারণা নিয়েওবলতে পারেন পাঁচ বছর পর আপনি এরকমভাবে নিজেকে দেখতে চান।
৫. আপনার জীবনের একটি ব্যর্থতার ঘটনা বলুন?
এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে বলে বসবেন না আপনার জীবনে আপনি কখনোই ব্যর্থতার সম্মুখীনহন নি বা কোন খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে আপনি যান নি। আমাদের সবার জীবনেই ব্যর্থতা রয়েছে।তবে ব্যক্তি ব্যর্থতার কথা না বলে কাজের সম্পৃক্ত ব্যর্থতার কথা বলুন যেখানে সফল হবার জন্য আপনি আশাবাদী ছিলেন।
ইন্টারভিউয়ার আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইবে ব্যর্থতার জন্য আপনি কিভাবে দায়গুলো নিজের মধ্যেনিচ্ছেন, কিভাবে নিজেকে শুধরিয়েছেন, আর ভুলগুলো যাতে না হয় সে জন্য কিভাবে নিজেকেঅনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন।আমরা কেউ ই শতভাগ নির্ভুল না কিন্তু ভুলগুলোর ক্ষেত্রে সহজ স্বীকারোক্তিহবে আপনার সফলতার দিকে আগানোর একটি মাইলফলক।
ভবিষ্যত চাকুরীর জন্য নিজেকে গড়ে তুলুন সততা দিয়ে। পারদর্শিতার জায়গায় নিজেকে আরো শক্তিশালী করব তুলুন। তাহলেই স্বপ্নের রাস্তায় হাঁটার আগের পরীক্ষাগুলো হবে আপনার জন্য সহজ।