এক স্থুল বুদ্ধি কবি এক অপরিচিত গ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সে একটা বিরাট বাড়ি দেখে মনে করল, এটা নিশ্চয় কোন আমীর ওমরাহের বাড়ি হবে। কিছু বকশিশ পাওয়ার আশায় সে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। বাড়িটা ছিল সে অঞ্চলের কুখ্যাত দস্যুদলের সর্দারের। বাড়িওয়ালার সামনে গিয়েই কবি তার প্রশংসাসূচক কবিতা তৈরি করে সুললিত কণ্ঠে আবৃতি শুরু করে দিল।
ডাকাত কবিতার মর্ম কি করে বুঝবে? বিরক্ত হয়ে সে তার সাঙ্গপাঙ্গকে হুকুম দিল, বেটার জামা কাপড় কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও।
সাথে-সাথে নির্দয়ভাবে তাই করা হলো। বেচারা আর কি করবে। উলংগ অবস্থায় সে পথে নামতে বাধ্য হলো। প্রচণ্ড শীতের সকাল। দারুণ ঠান্ডায় রাস্তাঘাট বরফে আচ্ছান্ন। বেচারা কবি বিবস্ত্র অবস্থায় পথে পা দিতেই ন্যাংটা মানুষ দেখে কুকুরের দল ঘেউ ঘেউ করে তাকে ঘিরে ধরল। একেতো শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে, তার ওপর চারদিকে আক্রমণোদ্যত কুকুরের পাল। নিরুপায় কবি কুকুর তাড়াবার উদ্দেশ্যে ঢিল ছুঁড়তে চাইল। কিন্তু সর্বত্র বরফে ঢাকা। ঢিল কোথায় পাবে? কঠিন বরফ সরিয়ে সে ঢিল সংগ্রহ করতে পারল না। নিরুপায় হয়ে সে চিতকার করে কেঁদে বলতে লাগলোঃ এ কোন হারামযাদাদের পাল্লায় পড়েছি। দুষ্টুরা কুকুরগুলোকে ছেড়ে দিয়ে আমার পেছনে লাগিয়ে দিয়েছে। আর ঢিলগুলো বরফ দিয়ে বেঁধে দিয়েছে।
দস্যু সরদার বালাখানার জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখছিল। কবির এই কথা শুনে সে না হেসে থাকতে পারলো না। তার দুর্দশা দেখে একটু দয়াও হলো। কবিকে ডেকে সে বললঃ ওহে সুধী! আমার কাছে কী সাহায্য চাও?
কবি করজোড় নিবেদন করল, দয়া করে আমার কাপড় জামা ফেরত দিলেই বেঁচে যাই। আর সাহায্যের দরকার নাই, ভিক্ষা চাই না কুকুর ঠেকাও।
কবির কাতরোক্তি শুনে নিষ্ঠুর দস্যুর মনেও দয়ায় উদ্রেক হলো এবং তার কাপড়-চোপড় ফেরত দিয়ে দিল। সঙ্গে আর এই প্রস্থ ভাল কাপড় এবং কিছু টাকা পয়সা দিয়ে কবিকে বিদায় করে দিল।
শিক্ষাঃ হিসাব করে কাজ করা উচিত। আমীর-ওমরা অথবা চোর ডাকাতের বাড়ি সাহায্যের জন্য যাওয়া উচিত নয়। তাদের নির্মম হৃদয়ের মধ্যে করুণা নেই। মানুষকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। রিক্ত হস্তে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে চলে যেতে হয়।